বাবাকে বানালেন মুক্তিযোদ্ধা, ভাতিজা হলো ছেলে! ফ্যাসিস্ট হাসিনার কোটা কেরামতি
১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৬ এএম | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৪ পিএম
আব্দুর রাজ্জাক শেখ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হন ২০০৫ সালে। তবে এর চার বছর আগেই ২০০১ সালে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় এএসপি হন তার ছেলে। তারপর যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়ে যান শেখ রফিকুল ইসলাম শিমুল। বর্তমানে অতিরিক্ত ডিআইজি তিনি। গত দুই যুগে অবৈধভাবে অর্জন করেছেন শত শত কোটি টাকার সম্পদ। অবশেষে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তার সম্পদ জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০১ সালের ৩১ মে ২০তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় এএসপি হিসেবে যোগ দেন রফিকুল ইসলাম। সে সময় রফিকুল ইসলামের বিসিএসে হাতে লেখা আবেদনপত্র এসেছে একটি গণমাধ্যমের হাতে। আবেদনপত্রে নিজের নাম লিখেছেন শেখ রফিকুল ইসলাম, বাবার নাম মৃত আব্দুর রাজ্জাক শেখ। আবেদনপত্রে রফিকুল নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে দাবি করেছেন। রোল নম্বর: ০১৭২৫৫।
আরও জানা গেছে, ২০০১ সালে রফিকুল ইসলামের বাবা মৃত আব্দুর রাজ্জাক শেখ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তই হননি। রফিকুল ইসলাম পুলিশে চাকরি পাওয়ার আগেই তার বাবা মারা যান। বিসিএসের আবেদনপত্রে রফিকুল ইসলাম নিজেও তার বাবাকে মৃত ঘোষণা করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র অনুযায়ী, ২০০৫ সালের ২১ মে বেসামরিক গেজেট ১১৪২ নম্বরে রফিকুল ইসলামের বাবাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, যা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৮০তম সভায় নিয়মিত করা হয়েছে। তার নামে এমআইএস নম্বর ০১৩৫০০১০১০৯। এমআইএস বা ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরি পাওয়ার পর নিজের ক্ষমতাবলে মৃত বাবাকে গেজেটভুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করান রফিকুল ইসলাম।
তার আত্মীয়স্বজন ও সহকর্মীরা জানান, পুলিশে চাকরি পাওয়ার পর বেপরোয়া হয়ে ওঠেন রফিকুল ইসলাম। গোপালগঞ্জে বাড়ি হওয়ায় একপর্যায়ে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদের সঙ্গে। এ ছাড়া বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন রফিকুল ইসলাম। এই দুই প্রভাবশালীর প্রভাব-বলয়ে আওয়ামী লীগ শাসনামলে ১০ বছরের ওপরে বিভিন্ন জেলায় পুলিশ সুপার হিসেব দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সময় বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে গড়েছেন অঢেল সম্পদ।
নামে-বেনামে যত সম্পদ: পুলিশ বাহিনীতে যোগদানের পর প্রভাব খাটিয়ে শুধু নিজের নয়, সম্পদ গড়েছেন ভাই, ভাগ্নে, স্ত্রী, শ্বশুরসহ স্ত্রীর পক্ষের আত্মীয়স্বজনের নামে। দেশের বাইরে স্বর্ণের ব্যবসাসহ রয়েছে অন্তত তিনটি জাহাজ।
এদিকে, মৃত চাচাকে বানিয়েছেন বাবা। নিখোঁজ চাচিকে বানিয়েছেন মা। জন্মসনদ থেকে শুরু করে শিক্ষাজীবনের সব জায়গায় বাবা-মায়ের জায়গায় ব্যবহার করেছেন চাচা-চাচির নাম। কারণ একটাই ওই চাচা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটার সুবিধা নিতে এমন প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন একজন স্কুলশিক্ষক। শাহ আমানউল্লাহ। তিনি তার ছেলের জন্য এমন করেছেন।
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বাসিন্দা এই পরিবার। স্কুলশিক্ষক শাহ আমানউল্লাহ নিজের ছেলেকে ভাইয়ের সন্তান বানিয়েই থেমে থাকেননি, বড় ভাইয়ের মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকাও আত্মসাৎ করছেন।
বর্তমান চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা কমিয়ে দিয়েছে সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারও কঠোরভাবে মুক্তিযোদ্ধা সনদ যাচাই-বাছাই করছে। এমন পরিস্থিতিতে ধরা পড়ার ভয়ে সম্প্রতি জন্ম-সনদসহ সব শিক্ষা সনদ থেকে চাচা-চাচিকে বাদ দিয়ে প্রকৃত বাবা-মায়ের নাম লিখিয়ে সংশোধন করিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সজীবের বাড়ি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বরনাল ইউনিয়নের বিলদুড়িয়া গ্রামে। জন্মসনদ, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ-এমএ পরীক্ষা সংক্রান্ত দলিলপত্রে দেখা যায়, সজীবের বাবার নাম এফ এম মশিউর রহমান এবং মায়ের নাম সুলতানা পারভীন। এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্রেও মশিউর রহমান এবং সুলতানা পারভীন তার পিতা-মাতা।
অনুসন্ধান বলছে, এফ এম মশিউর রহমান রাষ্ট্র স্বীকৃত একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার বর্তমান স্ত্রীর নাম ফাতিমা বেগম এবং তার একমাত্র সন্তানের নাম ফারহানা। এই একটি মেয়েসন্তান ছাড়া তার কোনো ছেলেসন্তান নেই। তিনি সজীবের বড় চাচা এবং সুলতানা পারভীন এই চাচার সাবেক স্ত্রী (তালাকপ্রাপ্ত)।
প্রতারণার বিষয়ে শাহ আবু সুফিয়ান সজীব বলেন, মশিউর রাহমান আমার চাচা, আমার বাবার নাম শাহ আমানউল্লাহ। অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সময় ভুল করে বাবার নামের জায়গায় চাচার নাম লেখা হয়েছিল। কেন এটা হয়েছিল, সেটা আমার জানা নেই। তবে এখন সংশোধন করা হয়েছে।
এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে তুমুল সমালোচনা। অনেকেই বলছেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে এটা নতুন নয়। অসংখ্য লোক এভাবে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট বানিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন।
কেউ কেউ বলছেন, অনুসন্ধান করলে দেশে হাজারও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ও ভুয়া বাবা-মা মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে চাকরি নিয়েছেন অসংখ্য লোক। যারা এ কাজ করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
যুক্তরাজ্যে ওজন কমানোর ওষুধে বেকারত্ব কমানোর চেষ্টা,বিশেষজ্ঞরা বলছে এটি কল্পনা
নেতানিয়াহুর বাড়িতে ফ্ল্যাশ বোমা নিক্ষেপ
বিসিএস ২৫ ফোরামের সভাপতি নূরুল করিম, মহাসচিব ইলিয়াস কবির
পেট্রোবাংলা অবরুদ্ধ, আটকা পড়েছেন কর্মকর্তারা
ভারতীয় শহরের ফুটপাতে হাঁটাচলায় প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জ!
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ডিজিটাল সেন্টারের ২৮ ট্যাব ও ৩ ল্যাপটপ চুরি করে অনলাইনে বিক্রি, সাবেক আনসার সদস্য গ্রেপ্তার
কুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা (এককভাবে) আগামী ১১ জানুয়ারি
সুন্দরগঞ্জে জামায়াত কর্মীকে হত্যা, আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেফতার
ট্রাম্পের গণবহিষ্কারের হুমকি,মার্কিন অভিবাসীরা আতঙ্কিত
নোয়াখালীতে অপহৃত শিশু মুন্সিগঞ্জে উদ্ধার, নারীসহ গ্রেফতার ৩
গণতন্ত্র ফেরাতে রূপরেখা ঘোষণা করবেন ড. ইউনূস, আশা যুক্তরাজ্যের
সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : রাজধানীতে তীব্র যানজট
অস্ট্রেলিয়ায় ভয়াবহ দাবানলে বাড়িঘর ও গবাদিপশু ধ্বংস হচ্ছে
এলন মাস্কের রাশিয়ার সাথে যোগাযোগ নিয়ে তদন্তের দাবি
কুতুবদিয়ায় দখলবাজ আ.লীগ নেতা মাহাবুব মেম্বারের বিরুদ্ধে দু'টি মামলা রুজু
"প্রতিযোগিতার ফাইনাল পর্বে আনিকা আলম, প্রার্থনা করেছেন ভোট"
চকরিয়ায় গায়েবী মামলার আসামী হলেন দেশ রূপান্তরের প্রতিনিধি
জলবায়ু পরিবর্তনে হিমবাহ গলে যাওয়ায় পার্বত্য অঞ্চলগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে
মওলানা ভাসানী আমাদের প্রেরণার উৎস : তারেক রহমান
ঝিকরগাছায় যুবদল কর্মী পিয়াল হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত ৫ আসামি গ্রেপ্তার